আওয়ামী সরকারের র্যাবের হাতে গুম হয়েছিলেন রংপুর বিএনপি নেতা আনিছুর রহমান লাকু। এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর মানবজমিনের রিপোর্ট প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর প্রশাসন নাটক সাজিয়ে মাদককারী হিসেবে অন্য জেলা থেকে উদ্ধার দেখিয়ে থানায় সোপর্দ করে। তিন যুগ ধরে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত লাকু আওয়ামী সরকারের প্রতিহিংসার রোষানলে পড়ে বিস্ফোরক, রাষ্ট্রদোহসহ ২৬ মামলার আসামি হয়েছেন। খেটেছেন ৮ বার জেল। লাকু জীবনের কঠিন সময় পার করেছিলেন ২০১৫ সালে। তৎকালীন রংপুরে আলোচিত জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী দল বাসা থেকে গুম ও খুনের উদ্দেশ্যে আটক করে। এরপর তার পরিবার র্যাব, পুলিশসহ সর্বত্রই যোগাযোগ করলে কেউ তার গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি। দিশাহারা হয়ে পড়ে লাকুর মা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা। এ নিয়ে মানবজমিনে রিপোর্ট প্রকাশ হলে অবস্থা বেগতিক দেখে র্যাব তাকে ইয়াবাসহ আটক দেখিয়ে থানায় সোপর্দ করে। মামলা চলাকালে মানবজমিন পত্রিকার রিপোর্টেই জামিন পান তিনি। সেইসঙ্গে প্রতিবেদক জাভেদ ইকবালকে সাফাই সাক্ষী করা হয়। জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন ২০১৫ সালের ৩রা অক্টোবর। সেদিন বিকালে রংপুর জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকু ও মহানগর বিএনপি’র সদস্য রাশেদুন্নবী খান বিপ্লবকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে র্যাব ও পুলিশ প্রশাসন সবখানে যোগাযোগ করে তার খবর মিলছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাব-পুলিশ প্রথম থেকেই তাদের আটক বা গ্রেপ্তারের কথা অস্বীকার করে যায়। জাপানি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পর শুধুমাত্র বিপ্লবকে হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে। এ হত্যা মামলায় বিপ্লবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালতের বিচারক তা মঞ্জুর করেন। আর এতেই খোলাশা হয়ে যায় বিএনপি নেতা বিপ্লব ও লাকু আটকের কাহিনী। তখনই আদালতপাড়ায় হইচই উঠে আটক বিএনপি আরেক নেতা আনিছুর রহমান লাকু কোথায়। এর পরদিন বুধবার লাকুরও খোঁজ পাওয়া যায়।
বিএনপি নেতা লাকুর জীবনে রয়েছে এক কাহিনী। জন্মের পর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তার বাবা মাহবুব রহমানকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার অপরাধে হত্যা করে। মা রেজোয়ানা ইসলাম লাকুকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় পড়েন। উপায় না দেখে তিনি একমাত্র সন্তানকে নিয়ে রংপুর গুপ্তপাড়ায় বোনের বাসায় আশ্রয় নেন। এরপর পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ইসলামের ইতিহাসে অনার্স-মাস্টার্স করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন লাকুর মা রেজোয়ানা। লাকু ১৯৮৭ সালে কারমাইকেল কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৯৫ সালে ছাত্রদলের জেলা সভাপতি, ২০০৪ সাল থেকে এক যুগ ধরে যুবদলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে মহানগর বিএনপি’র প্রতিষ্ঠতা সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পান। বর্তমানে তিনি রংপুর জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আপনার মানবজমিনে রিপোর্ট প্রকাশের কারণেই আজ আমি নতুন জীবন পেয়েছি।