মোঃ সাকিল তালুকদার, টাঙ্গাইল স্টাফ রিপোর্টার :
টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের আশ্রা দক্ষিণপাড় (মাস্টার বাড়ি মোর) গ্রামে অবস্থিত পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেডের কারখানা টি দীর্ঘ দিন ধরেই তাদের কারখানার বর্জ্য পার্শ্ববর্তী ফসলের ক্ষেত ও খোলা মাঠে উন্মুক্তভাবে ফেলে চলেছে। এর ফলে ঐ এলাকার পরিবেশ চরম ভাবে দূষিত হয়ে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে । কারখানার থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণে বর্জ্য তৈরি হয় তা তারা কারখানা ভিতরে নির্দিষ্ট জায়গাতে না ফেলে তা কারখানার আশেপাশের ফসলি জমি, আনারসের ক্ষেত এবং খোলা মাঠে ফেলা হচ্ছে । এতে করে ঐ এলাকায় মাটি পানি বায়ু চরম ভাবে দূষিত হচ্ছে । পোল্ট্রি মুরগির বিষ্ঠা খোলা মাঠে ফেলার ফলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে । পরিবেশ দূষণের ফলে ঐ এলাকাতে নানা ধরনের রোগ ব্যাধির দেখা দিয়েছে। পোল্ট্রি মুরগির বিষ্ঠা বাহিরে ফেলার কারণে নোংরা জায়গাতে মশা মাছি জন্ম নিচ্ছে। অতিরিক্ত মশা মাছির বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে দ্রুত সংক্রামিত হচ্ছে এলাকাবাসী বিশেষ করে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা। ঐ এলাকার গৃহপালিত গবাদি পশুপাখি গুলো অজানা রোগে মারা যাচ্ছে । ফসলি জমিতে কারখানার বর্জ্য ফেলার ফলে মাটিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। ফসল উৎপাদন না হওয়ায় ঐ এলাকার কৃষকদের ভোগান্তির শেষ নেই। কারখানার বর্জ্য বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে মিশে ঐ এলাকার পুকুর, ডোবা, খালের পানি দূষিত করছে। পানি দূষণের ফলে পুকুর,ডোবা এবং খালের মাছ মারা যাচ্ছে । আমাদের পরিবেশের গুরুত্ব পূর্ণ তিন টি উপাদান মাটি,পানি এবং বায়ু একসাথে দূষিত করছে উক্ত কারখানা টি । দৈনিক সময়ের ডাক, এলাকাবাসীদের সাথে কথা বললে এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী আরো জানান তারা এই কারখানাটির বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের আমল থেকে ঐ এলাকার পরিবেশ দূষিত করে আসছে । বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে কিন্তু কোন ধরনের লাভ হয়নি । বিগত সরকারের সময়ে প্রশাসনিক কর্তারা কোন অদৃশ্য শক্তির বাধার কারণে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। স্থানীয়রা জানায় এই কারখানাটির কর্তৃপক্ষের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সুসম্পর্ক ছিল। এর ফলে তারা সুষ্ঠু কোনো প্রতিকার পায়নি। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর তারা আশাবাদী ছিল তাদের এই দীর্ঘ দিনের সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান পাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা আবার উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ জানান । উপজেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ মার্চ ২০২৫ ইং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন মধুপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আনজুম পিয়া।এই অভিযানের সহযোগিতায় ছিলেন ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ আলির নেতৃত্বে মধুপুর সেনা ক্যাম্পের একটি দল। উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) সরজমিন সেখানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা দেখতে পান ।পরিবেশ দূষণের অপরাধে, “বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫” অনুসারে পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেডকে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। এছাড়া, অনতিবিলম্বে উপযুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু অভিযানের পর একমাসের বেলি সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি । তারা আগের মতোই কারখানার বর্জ্য ফসলি জমি এবং খোলা মাঠেই ফেলে চলেছে । পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড বাংলাদেশের প্রচলিত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে । আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু পিপলস পোল্ট্রির এমন পরিবেশ দূষণ যা আমাদের জীব বৈচিত্র্য কে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এ নিয়ে এলাকাবাসীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে । এলাকাবাসীদের দাবি অতি তাড়াতাড়ি এই অবস্থা থেকে যেন তারা মুক্তি লাভ করে, পরিবেশ যেন দূষিত না হয় এবং পরিবেশের জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।