• মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে গাজীপুর সিটির প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী কোনাবাড়ী বাইমাইল হরিনাচালা মেলায় অবৈধ টিকিট বাণিজ্য, সাংবাদিকদেরও ম্যানেজের চেষ্টা গাজীপুরে বাসন মেট্রো থানা প্রেসক্লাবে’র পক্ষ থেকে সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন। ইতালী পাঠানোর প্রলোভনে ২৭ জনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের মূলহোতা জাহিদ নওগাঁয় গ্রেপ্তার নওগাঁয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২৯ হাজার ৩১৯ কেজি চাল জব্দ করেছে প্রশাসন তরুণ সামাজিক সংগঠন আলোর-ফুল রাঙ্গামাটি’র অস্থায়ী অফিস উদ্ভোদন এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেককাটা দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত। প্রশাসনিক ক্ষমতা ফিরে পেলেন ইউপি চেয়ারম্যান -লিপ্টন বাঘাইছড়িতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রধান রংপুরে ট্রাকের সাথে সংঘর্ষে নিহত জাহিদুল নামে মোটরসাইকেল আরোহী : অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ওসি তৌহিদুল ইসলাম

বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে গাজীপুর সিটির প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী

টুটুল তালুকদার, গাজীপুর / / ৮ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

টুটুল তালুকদার , গাজীপুর :

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, গাজীপুরের মাটি ও মানুষের নেতা মরহুম অধ্যাপক এম এ মান্নানের আজ তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাঁকে স্মরণ করতে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসুচী। অধ্যাপক এম. এ. মান্নান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়েন। একের পর এক মিথ্যা ও রাজনৈতিক হয়রানী মূলক মামলায় গ্রেফতার ও কারাবাসের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা সহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিৎিসাধীন ছিলেন। তিনি আলহাজ্ব অধ্যাপক এম.এ. মান্নান অথবা মান্নান স্যার নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। গাজীপুরের মাটি ও মানুষের নেতা অধ্যাপক এ মান্নানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুর মহানগর বিএনপি ও অংগ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। গাজীপুরের সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক মেয়র আলহাজ্ব অধ্যাপক এম. এ মান্নানের সুযোগ্য উত্তরসূরী ও গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুর করিম রনির পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) গাজীপুরর মহানগর যুবদরের উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১১ টায় গাজীপুর রাজবাড়ী রোড মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এই কার্যক্রম চলবে। পূবাইল থানা বিএনপির আয়োজনে বেলা সাড়ে ১২ টায় মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির (সাধারন-সম্পাদক) এম মঞ্জুরুল করিম রনি । কাশিমপুর থানা বিএনপির উদ্যোগে দুপুর ১টায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির (সভাপতি) শওকত হোসেন সরকার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর মহানগর বিএনপি’র (সাধারন-সম্পাদক) এম মঞ্জুরুল করিম রনি। গাজীপুর সদর মেট্রো থানা বিএনপির আয়োজনে দলীয় কার্যালয়ে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক, এম মঞ্জুরুল করিম রনি। গাজীপুর মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বাদ আসর মহানগরীর সালনায় অধ্যাপক এম এ মান্নানের কবর জিয়ারত করেন। এছাড়াও এতিম ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। মহানগরীর মসজিদে দোয়া ও মোনজাত অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার মহানগরীর থানায় থানায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। তার মৃত্যু বার্ষিকীর এই আয়োজনে অসহায় ও দুস্থ এবং বঞ্চিতদের মাঝে রিকসা, ভ্যানগাড়ী, সেলাই মেশিন, নগদ অনুদান দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়ও অধ্যাপক এম. এ মান্নান স্যারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টর আয়োজন করা হয়েছে যা গাজীপুর জেলা বনাম মানিকগঞ্জ জেলার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে। জন্ম ও শিক্ষাজীবন: তিনি ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল গাজীপুর জেলা সদরের দক্ষিণ সালনায় জন্মগ্রহণ করেন। এম.এ.মান্নান গাজীপুরের সালনা গ্রামে ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কছিম উদ্দিন আকন। তিনি সালনা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে জয়দেবপুর রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে ময়মনসিংহ মুসলিম হাই স্কুল থেকে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি পাস করেন। পরে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি হন ও সেখান থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। কলেজ জীবনের শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়নে এমএসসিতে ভর্তি হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে টঙ্গী কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। কর্মজীবন: টঙ্গী কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে এম.এ.মান্নান কর্মজীবন শুরু করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি রাজনীতি ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করেন। টঙ্গী কলেজ ছেড়ে পরে তিনি গাজীপুর কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। রাজনৈতিক জীবন: অধ্যাপক এম এ মান্নান ১৯৭৮ সালে অধ্যাপনা থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে (জাগদল) যোগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবনে পদার্পন করেন। এই জাগদলই ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে এম.এ.মান্নান তিনি দলের সদস্য থেকে শুরু করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মান্নান দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। অধ্যাপক মান্নান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে দলীয়ভাবে সালনা গ্রাম সরকার প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। পরে জাতীয় গ্রাম সরকারের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিবেরও দায়িত্বে ছিলেন। তবে, অধ্যাপক মান্নানের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে রাজনৈতিক উত্থান শুরু। অধ্যাপক মান্নান প্রথম ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউলতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে আরও পরপর চার বার তিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচন করে বিজয়ী হন। অধ্যাপক মান্নান ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর ও টঙ্গী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে এম এ মান্নান দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য হিসাবে বিজয়ী হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাকে তৎকালীন সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করেন। পরে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত হলে, তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদন্বন্ধীতা করেন। তিনি মেয়র প্রার্থী হিসেবে টেলিভিশন প্রতীকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পরে তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন। তাকে নাশকতা, গাড়িপোড়ানোসহ প্রায় ৩০টি মিথ্যা মামলার আসামী করে গ্রেফতার ও নানাভাবে হয়রানী করা হয়। ২০১৫ সালে তাকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সিটি মেয়রের ৫ বছর মেয়াদকালে ২৮ মাস কারাগারে বিনাদোষে কারাগারে ছিলেন। মেয়র থাকাকালীন মিথ্যা মামলার কারণে তিনি তিনবার বরখাস্ত হয়েছিলেন।


More News Of This Category
bdit.com.bd